জগলুল হুদা, রাঙ্গুনিয়া প্রতিনিধি: ভাঙ্গাচুরা স্কুল, বাঁশ-চাচ আর টিনের বেড়া দিয়ে নির্মিত শ্রেণি কক্ষ আর খোলা আকাশের নীচে গাছের ছায়ায় নিয়মিত পাঠ নিয়ে যাচ্ছেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নের ১৪৬নং কালাগাজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে বই হাতে দূরদূরান্ত থেকে শিক্ষাগ্রহণ করতে আসছে পাড়া-গাঁয়ের এ সব কোমলমতি শিক্ষার্থীরা।
সরকার শিক্ষা খাতে সর্বাধিক আর্থিক সুবিধা দিয়ে থাকলেও উপজেলার এই প্রাথমিক বিদ্যালয়টি আজো রয়েছে অবহেলিত। নেই নিজস্ব কোন বাথরুম ও পানির ব্যবস্থা। পাশ্ববর্তী মসজিদের টিনের তৈরি বাথরুম আর নলকূপই ভরসা তাদের। ৩ শতাধিক শিক্ষার্থীর জন্য রয়েছে মাত্র ৪ জন শিক্ষক। সব মিলিয়ে খুবই নাজুক বিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি। তবে শীঘ্রই বিদ্যালয়ের জন্য নতুন ভবন বরাদ্দ দেওয়া হবে বলে উপজেলা প্রশাসন সুত্রে জানা যায়।
জানা যায়, চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়া উপজেলার লালানগর ইউনিয়নে প্রাণী সম্পদ অধিদপ্তরের সাবেক মহাপরিচালক ডা. নজির আহমেদের হাত ধরে ২০০২ সালে বাঁশ-চাচের বেড়ায় প্রতিষ্ঠিত হয় কালাগাজি পাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এর আগে গ্রামে কোন প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় বাঁশ-চাচের বেড়ায় নির্মিত হলেও বিদ্যালয়টি স্থানীয়দের মাঝে ব্যাপক সাড়া ফেলে। দিন দিন বাড়তে থাকে শিক্ষার্থী কিন্তু হয় না কোন পাকা দালান। এলাকায় শিক্ষার্থীদের ব্যাপক চাহিদার কথা বিবেচনায় এনে সরকার ২০১৩ সালে এটিকে জাতিয়করণ করে। বিদ্যালয় জাতিয়করণ হলেও পাল্টায় না শিক্ষার্থীদের ভাগ্য। সেই আগের আদলেই চলে পাঠদান।
অথচ বিদ্যালয় হতে ৩ কি. মি দূরের ছাদনগর, ৪ কি. মি. দূরের আগুনিয়া চা বাগান, ১ কি. মি. দূরের কুরমুকুল সহ মুকুল সৈয়দবাড়ি ও কালাগাজি বাড়ির ৩ শতাধিক শিক্ষার্থী প্রাথমিক শিক্ষার পাঠ নিতে প্রতিদিন এখানে ছুটে আসে। বাঁশের বেড়া দিয়ে নির্মিত বিদ্যালয়ের ৫টি কক্ষে বাড়তি শিক্ষার্থীদের পাঠ দান করতে ৪ জন শিক্ষকের ব্যাপক বেগ পেতে হয়। অনেক সময় শিক্ষার্থীদের জায়গা সংকুলানের কারনে শিক্ষার্থীরা খোলা আকাশের নীচে ক্লাস করছে।
স্কুলের শিক্ষকরা জানালেন জরাজীর্ন ভবন আর স্কুলে জায়গা সংকুলান না হওয়ায় ছাত্র-ছাত্রীদের খোলা আকাশের নীচে ক্লাস নিতে হয়। প্রাথমিক শিক্ষায় কোমলমতি এ সব শিশু শিক্ষার্থীদের রোদ, বৃষ্টি আর খোলা আকাশ থেকে সরিয়ে একটি সুন্দর শিক্ষার পরিবেশে না আনলে হয়তো এরা অকালেই ঝরে যাবে। সারা জীবন বঞ্চিত হবে শিক্ষার আলো থেকে। তাই এসব কোমলমতি শিশুদের জন্য নতুন ভবন নির্মাণ করে সুন্দর পরিবেশে এনে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিলে উপকৃত হবে বিদ্যালয় সংশ্লিষ্ট ৫ হাজার জনসংখ্যা অধ্যূষিত এলাকাটি।
বিদ্যালয় পরিচালনা পরিষদ সভাপতি জসিম উদ্দিন তালুকদার জানান, বিদ্যালয়টি অত্র এলাকায় আমার জেঠা (পিতার বড় ভাই) প্রতিষ্ঠা করেছিল। অনেক কষ্টে তিনি দীর্ঘদিন এটি পরিচালনা করেছেন। বিদ্যালয়টি জাতিয়করণ হলেও পুরাতন বাঁশের বেড়ায় নির্মিত কক্ষে পাঠদান চলছে। তাছাড়া অধিক শিক্ষার্থী হওয়ায় স্কুলে ক্লাস রুমের বেশ সংকট রয়েছে। বেশ কিছু শিক্ষকেরও শুন্যতা রয়েছে দীর্ঘদিন ধরে। অত্র এলাকার মানুষ খুবই হতদরিদ্র এবং শিক্ষার আলো বঞ্চিত। তাই এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দিতে বিদ্যালয়টি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিতা রেখে চলেছে। তিনি বিদ্যালয়ে নতুন ভবন পেতে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষন করেছেন।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) মো. ইদ্রিছ জানান, ‘বিদ্যালয়টির ব্যাপারে তাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। বর্তমান সরকার শিক্ষা ব্যবস্থার উপর বিশেষ নজর দিয়েছেন। শিক্ষা ব্যবস্থা আধুনিকরনের বিষয়ে বরাদ্ধ দিচ্ছে সরকার। আশারাখি প্রতিষ্ঠানটিও খুব শীঘ্রই নতুন ভবন পাবে।’
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ কামাল হোসেন জানান, উপজেলায় কিছু শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সমস্যা রয়েছে। সেগুলির তালিকা সংশ্লিষ্ট দপ্তরে প্রেরন করা হয়েছে। এই প্রতিষ্ঠানটিও সেই তালিকায় রয়েছে। বরাদ্ধ পেলে যথাযত ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে তিনি জানা
অগ্রদৃষ্টি.কম // এমএসআই